বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা। মে দিবসে চারদিকে সরকারি ছুটির আমেজ। খুলনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ শিববাড়ি মোড় অনেকটা ফাঁকা। পাশেই কাজের জন্য বসেছিলেন রাজমিস্ত্রীর সহকারী দিনমজুর আব্দুর রশিদ। কয়রা উপজেলা থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ বলেন, মে দিবস-টিবস ভালো বুঝি না। কালকে কাজ পাইনি, আজকেও কাজ না পেলে টানাটানির মধ্যে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, আট জনের পরিবার আমার। আমার বউ-ছেলে গ্রামে থাকে। ১৫/১৬ বছর ধরে আমি এখানে মাটি কাটা, রাজমিস্ত্রির জোগালে যেদিন যে কাজ পাই তাই করি। এখানে একা থাকি নিজে চলে সামান্য কিছু টাকা বাড়ি পাঠায়। আমাদের কাজ পেলে সবদিনই সমান। কাজ না পেলে কষ্টের।
কাজেই মাধ্যম নিজের ভাগ্য পরিবর্তন আশায় ফরিদপুর রাজবাড়ি থেকে মানিকের খুলনায় আশা। ১০/১২ বছর হলো এখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। কাজ খুঁজতে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে কাজের অপেক্ষায় বসেছিলেন তিনি।
মে দিবসে ছুটির দিনে কাজে এসেছে কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বউ আর ছোট ছেলেকে নিয়ে নদীর ওপারে ভাড়া থাকি। পেট তো মানে না, পেটের জন্য আসতে হয়। কাজ না করলে পরিবার খাবে কি? বাজার তো নিয়ে যেতে হবে ঘরে। আমরা হলাম দিনমজুর প্রতিদিন কাজ করা লোক।
বৃহস্পতিবার ১ মে, সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনাধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।
সকালে বিভিন্ন এলাকার শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, অনেকের জীবনেই প্রভাব ফেলেনি মে দিবস।
নগরীর গোবরচাকা প্রধান সড়কে ঠেলাগাড়িতে করে কাঠ নিয়ে যাচ্ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। জানালেন, ঠেলাগাড়িতে কাঠ বিক্রি করে নয়জনের পরিবার চালায়। ভাই-বোন পড়াশোনা করে। তার ওপর জিনিসপত্রে যে দাম তাতে চলতে কষ্ট হয়ে যায়। মূলত এই ঠেলাগাড়ির উপরেই আমাদের জীবিকানির্বাহ করে। একদিন বাদে একদিন কাঠ বিক্রি করি। দিনে যা আসে তাই দিয়ে কোনোমতো চলি। এর ওপর একদিন ছুটি কাটোনো আমাদের জন্য না।
হোটেল ব্যবসায়ী ইয়ানূর রাহমান বলেন, দোকান খোলা রেখেছি কারণ আমিসহ দোকানে আরো দুই জন কর্মচারি আছে। আমাদের কোনো ছুটি নেই। ছুটি নিলে খাবো কি? গরীব মানুষের শরীর খারাপ হয় না আর কোনো দিবসে ছুটিও লাগে না। তাদের লাগে সারাদিনের কষ্টের টাকা দিয়ে ঘরের বাজার।
খুলনা গেজেট/এএজে